Categories
রাইটিং

আইইএলটিএস রাইটিং: একটু বেশিই জটিল

যারা মোটামুটি ইংরেজি জানেন, তাদের অনেকেই আইইএলটিএস রাইটিং টেস্ট এ ভালো স্কোর করতে পারেন না। একজন অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবার আছেন, নাম জে, তিনি বারবার জানিয়ে দেন – নেটিভ স্পিকার হওয়া সত্ত্বেও তিনি তিনবার আইইএলটিএস রাইটিং এ ৭.৫ পেয়েছেন, চতুর্থবারে ৮.৫। তিনি সত্যি কথা বলে থাকলে আইইএলটিএস রাইটিং যে কঠিন সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। এই পোস্টে আমরা আইইএলটিএস রাইটিং এর মৌলিক বিষয়াদির পাশাপাশি প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন পরামর্শ এবং রিসোর্সের উল্লেখ করবো।

আইইএলটিএস রাইটিং প্রস্তুতি কেন গুরুত্বপূর্ণ
একাডেমিক নাকি জেনারেল টেস্টিং
পরীক্ষা পদ্ধতি
প্রশ্নের ধরণ
মার্কিং
কিভাবে প্রস্তুতি নেয়া উচিত
রাইটিং রিসোর্স

আইইএলটিএস রাইটিং প্রস্তুতি কেন গুরুত্বপূর্ণ

ভূমিকায় দেয়া জে’র উদাহরণ থেকেই রাইটিং প্রস্তুতির গুরুত্ব বুঝে যাওয়ার কথা। আপনি লিসেনিং বা রিডিং ভালো করেছেন কি মন্দ তা আপনি পরীক্ষা দেয়ার সময়ই বুঝে যাবেন। কিন্তু আইইএলটিএস রাইটিং টেস্ট ভালো হলো কিনা, কতটা ভালো হলো, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া সহজ নয়। এখানে প্রত্যেক সঠিক উত্তরের জন্য নাম্বার বরাদ্দ থাকে না। ফলে আপনি প্রচুর লিখেও কম স্কোর করতে পারেন আবার মোটামুটি লিখেও ভালো স্কোর করতে পারেন।

এ কারণেই আইইএলটিএস রাইটিং এর জন্য ভালো রকম প্রস্তুতি নিয়ে তবেই আইইএলটিএস টেস্টে অংশগ্রহণ করা উচিত। প্রস্তুতি নিয়ে প্র‍্যাকটিস করতে থাকলেই এক সময় আপনি বুঝে ফেলবেন ঠিক কিভাবে লিখলে গড়পড়তা স্কোরের সীমাকে অতিক্রম করতে সক্ষম হবেন।

একাডেমিক নাকি জেনারেল টেস্টিং

রিডিং টেস্টের মতো আইইএলটিএস রাইটিং টেস্টের ক্ষেত্রেও দুটো ভাগ রয়েছে। আইইএলটিএস রেজিস্ট্রেশনের সময়ই আপনাকে জানিয়ে দিতে হবে আপনি একাডেমিক নাকি জেনারেল ট্রেনিং টেস্ট দিতে আগ্রহী। যদি এই দুইয়ের পার্থক্য না জানেন, তাহলে বলি, আপনি উচ্চতর পড়াশোনার উদ্দেশ্যে আইইএলটিএস দিলে একাডেমিক আইইএলটিএস এর জন্য রেজিস্ট্রেশন করবেন। এছাড়া পড়াশোনা ব্যতীত অন্য উদ্দেশ্যে যেমন সেকেন্ডারি এডুকেশন, ট্রেনিং ইত্যাদির উদ্দেশ্যে আইইএলটিএস দেন তাহলে জেনারেল ট্রেইনিং আইইএলটিএস এর জন্য রেজিস্ট্রেশন করবেন। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউকে এবং নিউজিল্যান্ডে মাইগ্রেট করতে চাইলেও জেনারেল ট্রেনিং আইইএলটিএস স্কোরের প্রয়োজন হয়। দুই মেথডের প্রশ্নের প্যাটার্ণ দুই রকম হয়, সুতরাং প্রস্তুতি নেয়ার আগেই আপনি নিশ্চিত হয়ে নিন আপনি ঠিক ম্যাটেরিয়ালস সংগ্রহ করেছেন কিনা। দুই মেথডের প্রশ্নের পার্থক্য বোঝার জন্য আপনাকে এই ওয়েবসাইট রেকমেন্ড করলাম।

আর হ্যাঁ, এই পোস্টে কিন্তু কেবল একাডেমিক রাইটিং নিয়ে লিখেছি, জেনারেল ট্রেনিং বিষয়ে পরবর্তীতে লেখা হবে।

পরীক্ষা পদ্ধতি

রিডিং টেস্ট হয়ে যাওয়ার পরে আপনি ৫-৭ মিনিট সময় পাবেন। এই সময়ের মধ্যে আপনার রিডিং টেস্ট এর প্রশ্ন ও উত্তরপত্র সংগ্রহ করা হবে, রাইটিং টেস্ট এর প্রশ্ন দেয়া হবে এবং কিছু নির্দেশনা দেয়া হবে। আইইএলটিএস রাইটিং টেস্ট এর জন্য বরাদ্দকৃত সময় এক ঘন্টা বা ৬০ মিনিট। এক মিনিট কম বা বেশী হবে না। এই সময়ের মধ্যে আপনাকে দুটি এসে (Essay) লিখতে হবে। প্রথমটির জন্য ২০ মিনিট এবং পরেরটির জন্য ৪০ মিনিট ব্যয় করার জন্য পরামর্শ দেয়া হলেও আপনি কম বা বেশী সময় নিতে পারবেন। তবে একটির জন্য বেশী সময় নেয়া মানে অপরটির জন্য কম সময় পাওয়া, এটা আপনাকে মনে রাখতেই হবে।

প্রশ্নের ধরণ

আইইএলটিএস রাইটিং টেস্টে দুটি প্রশ্ন থাকবে। প্রথম প্রশ্নটিতে কোন গ্রাফ বা ছবি থাকবে। নির্দেশনা অনুযায়ী কমপক্ষে ১৫০ শব্দের মধ্যে লিখতে হবে। গ্রাফের মধ্যে পাই চার্ট থাকতে পারে, বার চার্ট থাকতে পারে। চার্টের সংখ্যা এক, দুই বা তার বেশী হতে পারে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, বিভিন্ন ধরনের গ্রাফের মাধ্যমে কোন তথ্য উপস্থাপন করা হয়। বার চার্টে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট পিরিয়ডে একাধিক বিষয়ের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। পাইচার্টে সাধারণত শতাংশ হিসেবে তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া, কোন প্রসেস-এর ছবি থাকতে পারে। যেমন, ধরুন গম চাষ থেকে শুরু করে ব্রেড তৈরী পর্যন্ত বিভিন্ন প্রক্রিয়ার ছবি।

গ্রাফ থাকুক বা প্রসেসের ছবি – আপনাকে কেবল বর্ণনা করতে বলা হবে। প্রয়োজনবোধে আপনি গ্রাফ বা প্রসেসের বিভিন্ন অংশের মধ্যে তুলনা করতে পারেন। যা করা যাবে না তা হলো – নিজের মতামত প্রকাশ। আপনাকে মতামত প্রকাশের জন্য নির্দেশনা দেয়া হবে না, সুতরাং আপনি কেন তা করবেন?

নিজের মতামত প্রকাশের সুযোগ পাওয়া যায় দ্বিতীয় প্রশ্নে। এখানে এক বা দুই বাক্যে একটি সিচুয়েশন উপস্থাপন করে নির্দেশনা দেয়া হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী কমপক্ষে ২৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর লিখতে হবে।

একটি উদাহরণ দেয়া যাক। প্রশ্নে হয়তো বলা হলো – অনেকে মনে করেন টিনএজ ছেলেমেয়েদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করা উচিত না, তবে অনেকে মনে করেন তাদের মোবাইল ব্যবহারে বাধা দেয়া উচিত নয়। মোবাইল ব্যবহারের ভালো ও মন্দ দিকগুলো তুলে ধরে আপনার নিজস্ব মতামত উপস্থাপন করুন।

বুঝতেই পারছেন – এখানে আপনাকে টিনএজ ছেলেমেয়েদের মোবাইল ব্যবহারের সুফল যেমনি বলতে হবে, তেমনি কুফলও বলতে হবে এবং তারপর নিজের অবস্থান তুলে ধরে তার স্বপক্ষে মতামত উপস্থাপন করতে হবে।

এই প্রশ্নে বিভিন্ন নির্দেশনা থাকতে পারে। এমনকি, প্রশ্নে হয়তো কোন একটি বিষয়কেই নির্বাচিত করে দেয়া হলো এবং আপনাকে বলা হলো – সেই বিষয়ে আপনার বক্তব্য উপস্থাপন করতে। নির্দেশনাটুকু মেনে নিয়ে ২৫০ এর অধিক শব্দের মধ্যে আপনাকে উত্তর করতে হবে।

বলে রাখা উচিত, লিসেনিং বা রিডিং এ যেমন আপনাকে শুধুমাত্র পেন্সিল ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছিল, আইইএলটিএস রাইটিং-এর ক্ষেত্রে সেই সীমাবদ্ধতা থাকবে না। আপনি পেন্সিল বা কলম – যে কোনটি ব্যবহার করতে পারবেন।

মার্কিং

স্পিকিং টেস্টের মতো রাইটিং টেস্টেও ভুল-শুদ্ধের উপর মার্কিং নির্ভর করে না। আইইএলটিএস রাইটিং টেস্টে আপনি যা লিখেছেন তা মূল্যায়নের সময় চারটি বিষয় লক্ষ্য করা হবে বলে ব্রিটিশ কাউন্সিল জানিয়েছে। এগুলো হলো – Task Achievement, Coherence and Cohesion, Lexical Resource এবং Grammatical Range and Accuracy।

শেষের দুটো পয়েন্ট আপনার বুঝতে কষ্ট হবে না, তাই প্রথম দুটো বিষয় সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করা উচিত। টাস্ক অ্যাচিভমেন্ট-এর মাধ্যমে দেখা হয় আপনাকে যা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তার কতটুকু আপনি অনুধাবন করে লিখতে পেরেছেন। উপরের উদাহরণ থেকেই যদি বলি, আপনাকে সুফল কুফল দুটো উল্লেখ করতে বলা হলেও আপনি কেবল কুফল বলে গেলেন, সুফল বললেন না – তার মানে টাস্ক অ্যাচিভমেন্টে আপনি ব্যর্থ হলেন!

কোহারেন্স এন্ড কোহেসন বলতে মূলত আপনি কতটা গুছিয়ে লিখতে পেরেছেন, সামঞ্জস্য বজায় রাখতে পেরেছেন কিনা, প্রত্যেক প্যারাগ্রাফে একটি সেন্ট্রাল আইডিয়া আছে কিনা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করা হয়। তাছাড়া, লিংকিং ওয়ার্ড ব্যবহার করেছেন কিনা সেটাও লক্ষ্য করা হবে।

এই প্রত্যেকটি ক্রাইটেরিয়ার উপর ভিত্তি করে আইইএলটিএস রাইটিং-এ আলাদাভাবে ৯ এর উপর মার্কিং করা হবে। তারপর প্রত্যেক ক্রাইটেরিয়ার নাম্বার যোগ করে ৪ দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যাবে আপনার প্রথম এসে’র স্কোর। দ্বিতীয় টাস্কের গুরুত্ব প্রথম টাস্কের তুলনায় দ্বিগুন। এ কারণে আপনি যদি দ্বিতীয় এসে’তে ৮.০ এবঙ ১ম এসে’তে ৬.৫ পান, তাহলে আপনার স্কোর হিসাব করা হবে – {৮*(২/৩)+৬.৫*১}/৩=৭.৫।

সুতরাং, দ্বিতীয় এসে’তে আপনাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

কিভাবে প্রস্তুতি নেয়া উচিত

যে চারটি বিষয়ে মূল্যায়ন করা হয়, সেগুলোর কোনটিতে আপনার কি ধরনের দক্ষতা রয়েছে তার উপর নির্ভর করবে আপনার প্রস্তুতি কিভাবে নেয়া উচিত। শুদ্ধ ইংরেজি বলার জন্য আপনাকে গ্রামার শিখতেই হবে, সুতরাং এখানে ঘাটতি থাকলে পূরণ করে নেয়ার চেষ্টা করুন। গ্রামাটিক্যাল রেঞ্জ বলতে আপনি বিভিন্ন ধরনের বাক্য লিখতে পারেন কিনা সেটা যাচাই করা হয়, ফলে গ্রামার শিখতে গেলে আপনার এটাও শেখা হয়ে যাবে।

আইইএলটিএস এর লেক্সিকাল রিসোর্স গুরুত্বপূর্ণ, তবে এ জন্য আপনাকে বই ধরে শব্দের পর শব্দ মুখস্ত করে যেতে হবে – এমনটি নয়। একই শব্দ বারবার প্রয়োগ না করে একই অর্থবোধক বিভিন্ন শব্দ প্রয়োগ করা শিখতে হবে। রাইটিং এ এত কঠিন টপিক দেয়া হবে না যা আপনি পারবেনই না। মনে রাখবেন, আপনার ইংরেজি দক্ষতা যাচাই করার জন্য আইইএলটিএস রাইটিং টেস্ট, আপনার জ্ঞানের দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য নয়।

বাকী যা থাকলো – কোহারেন্স এন্ড কোহেসন এবং টাস্ক অ্যাচিভমেন্ট, তার জন্য আপনাকে প্র্যাকটিস করতে হবে। নানা রকম পরামর্শভিত্তিক ব্লগ/ওয়েবসাইট রয়েছে, ভিডিও টিউটোরিয়াল রয়েছে – সেগুলো থেকে পরামর্শ নিয়ে কাজে লাগাতে হবে। তবে খুব বেশি ওয়েবসাইট/ভিডিও দেখা উচিত নয় – এতে আপনার বিভ্রান্ত হওয়ার ও কনফিডেন্স কমে যাওয়ার আশংকা দেখা যেতে পারে।

সর্বশেষ, প্রচুর প্র্যাকটিস করতে হবে। আইইএলটিএস-এ দক্ষ এমন কারও সাহায্য নিতে পারেন। তাহলে ভুলগুলো শুধরে নিতে পারবেন। বিভিন্ন কোচিং সেন্টার-এ মক টেস্ট দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে, তারা আপনার ভুলগুলো চিহ্নিত করে দিবেন। এমনকি, আপনারা কয়েকজন পরীক্ষার্থী মিলে একত্রে একে অন্যের উত্তর মূল্যায়ন করে, বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে নিজেদের মানোন্নয়ন করতে পারেন।

রাইটিং রিসোর্স

যথারীতি, রাইটিং প্র্যাকটিস করার জন্য, বুদ্ধি পরামর্শের জন্য আমি কতগুলো ওয়েবসাইট, অ্যাপ্লিকেশন, ইউটিউব চ্যানেলের নাম জানিয়ে দিয়েছি। তবে সেগুলো পাওয়া যাবে আইইএলটিএস রিসোর্স সেন্টার-এ।

রাইটিং টেস্টে উতরানো অনেকের জন্যই একটু কঠিন। অনেক বেশি প্র্যাকটিস করার মাধ্যমে আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং পরীক্ষায় ভালো করার কনফিডেন্স পাবেন। তাই প্রচুর প্র্যাকটিস করার চেষ্টা করুন, ভালো স্কোর আপনি পাবেনই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *