Categories
লিসেনিং

আইইএলটিএস লিসেনিং : যেভাবে প্রস্তুতি নিলে ৭+ স্কোর পাওয়া সম্ভব

আইইএলটিএস পরীক্ষায় নাম্বার তোলার সবচেয়ে বেশী সুযোগ পাওয়া যায় লিসেনিং সেকশনে। আবার, সবচেয়ে খারাপ করার আশংকাও এই সেকশনেই। তাই লিসেনিং টেস্টের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি না নিয়ে আইইএলটিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা ঠিক হবে না। এই পোস্টে আইইএলটিএস লিসেনিং সংক্রান্ত সব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা হবে।

আইইএলটিএস লিসেনিং কেন গুরুত্বপূর্ণ

শুরুতেই একটু ধারণা দিয়েছি, আবারও বলছি। আইইএলটিএস লিসেনিং এ ৪০টি প্রশ্নের উত্তরে ৪০ পাওয়া সম্ভব। তবে এজন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং লিসেনিং এ অত্যন্ত দক্ষ হতে হবে। খারাপ নাম্বার পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? নেহায়েত কম না। কেন সেটা ব্যাখ্যা করছি।

আইইএলটিএস লিসেনিং এ আপনাকে প্রায় ত্রিশ মিনিটের অডিও শুনতে হবে। প্রত্যেকটি সেকশনের অডিও শোনার আগে প্রশ্নগুলো পড়ার সময় পাওয়া যাবে। ফলে, অডিওর ধারাবাহিকতা সম্পর্কে আপনি আগেই ধারণা পেয়ে যাবেন। একইভাবে, অডিও শুনতে শুনতে প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। এক্ষেত্রে, পরের প্রশ্নের উত্তর আগে শোনার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।

লিসেনিং টেস্টের এই পদ্ধতির কারণে আপনি সবগুলো প্রশ্নের উত্তরই করার সুযোগ পাবেন। এমনকি কোন প্রশ্ন ছুটে গেলে পরে উত্তর স্থানান্তরের জন্য বরাদ্দকৃত ১০ মিনিটকে কাজে লাগাতে পারবেন।

কিন্তু ইংরেজি ভিন্ন অন্যভাষীদের জন্য বিষয়টা এত সহজ না। আইইএলটিএস লিসেনিং টেস্টে ১০০% মনযোগ ধরে রাখতেই হবে। অন্যথায় প্রশ্ন ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। তার উপর রয়েছে একই ধরণের উচ্চারন। থার্টিন এবং থার্টি – এই দুয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারা দক্ষতার বিষয়। আরও রয়েছে বানান ভুল হবার সম্ভাবনা। উত্তরে কী শব্দ লিখতে হবে সেটা হয়তো আপনি নিশ্চিত জানেন, কিন্তু বানান নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এই সন্দেহ দূর করার কোন উপায় পাওয়া যাবে না। বানান সঠিক বা ভুল হবার উপর আপনার স্কোর অনেকাংশে নির্ভর করবে।

এ কারণেই আইইএলটিএস লিসেনিং টেস্ট এত গুরুত্বপূর্ণ। প্রচুর প্র‍্যাকটিসের মাধ্যমে আপনি যদি দক্ষতা বাড়িয়ে নিতে পারেন, তাহলে হয়তো ৯ এ ৯ পেয়ে যাবেন। আবার ৬ বা ৬.৫ পাওয়ার আশংকাও থেকে যায়।

লিসেনিং পরীক্ষা পদ্ধতি

আইইএলটিএস লিসেনিং এ সর্বমোট ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এর জন্য নাম্বার বরাদ্দ রয়েছে ৪০ যা ৯ স্কোরে পরিবর্তন করা হয়। আইইএলটিএস পরীক্ষার দিনে প্রথমেই আইইএলটিএস লিসেনিং টেস্ট এ অংশগ্রহণ করতে হয়।

এই টেস্ট-এ আপনাকে হেডফোনে প্রায় ৩০ মিনিটের অডিও শুনে সে অনুযায়ী উত্তর করতে হবে। এই ত্রিশ মিনিটের সবটিই যে কথা বার্তা তা কিন্তু নয়। লিসেনিং টেস্ট সংক্রান্ত যত রকম ইনস্ট্রাকশন রয়েছে, সব এই ত্রিশ মিনিটের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত।

আইইএলটিএস লিসেনিং সেকশনে ফাঁকা সময়ও থাকবে কিছু। এ সময় আপনি কিছু শুনবেন না। মূলত এর মাধ্যমে মূল অডিও শোনার আগে প্রশ্ন এবং ইনস্ট্রাকশনগুলো পড়ে নেয়ার জন্য সময় দেয়া হয়। একেকটি সেকশন শেষ হবার পরে উত্তর যাচাই করা জন্যও কিছু সময় দেয়া হয়।

প্রাথমিকভাবে প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর করতে হবে। সকল অডিও সেকশন শোনা হয়ে গেলে ১০ মিনিট সময় দেয়া হবে প্রশ্ন থেকে উত্তরপত্রে উত্তর স্থানান্তর করার জন্য। অর্থ্যাৎ ত্রিশ যোগ দশ মোট চল্লিশ মিনিট পাওয়া যাবে লিসেনিং টেস্টের জন্য। রিডিং টেস্টের মতো এখানেও উত্তর লিখতে আবশ্যিকভাবে পেন্সিল ব্যবহার করতে হবে।

প্রশ্নের প্রকারভেদ ও নাম্বার

আবারও বলছি, আইইএলটিএস লিসেনিং এ মোট চারটি সেকশনে অডিও শুনে উত্তর করতে হয়। এই অডিওগুলোর মধ্যে ফোনে কথোপকথন, দুই বা তিনজন ব্যক্তির মধ্যে কথোপকথন, মনোলগ বা এক ব্যক্তির লেকচার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। প্রশ্নের মধ্যে শূন্যস্থান পূরণ, টিক চিহ্ন থাকে। তবে এদের ফরম্যাট বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।

শুণ্যস্থান পূরণের ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেয়া থাকবে। এক, দুই বা তিন শব্দ এবং কখনও কখনও এর সাথে একটি নাম্বার দিয়ে উত্তর করতে হয়। এই নির্দেশনা কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যত শব্দ ব্যবহার করে উত্তর লিখতে বলা হয়েছে তার কম শব্দ ব্যবহার করা যাবে কিন্তু বেশী শব্দ ব্যবহার করা যাবে না।

আরও থাকবে মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেন। এই প্রশ্ন কয়েকভাবে হতে পারে। একটি প্রশ্নের বিপরীতে তিনটি বা চারটি উত্তরের মধ্য থেকে একটি বাছাই করতে হতে পারে। আবার, একই প্রশ্নের মধ্যে হয়তো ছয় সাতটি উত্তর দেয়া আছে, এর মধ্য হতে দুই তিনটি সঠিক উত্তর বাছাই করে নিতে হবে।

আইইএলটিএস লিসেনিং-এ ৯ এর মধ্যে আপনি পূর্ণ নাম্বার অথবা দশমিক পাঁচ সহ নাম্বার পেতে পারেন। একটা চার্ট দিয়ে দিচ্ছি। কতগুলো সঠিক উত্তরের জন্য কত স্কোর পাওয়া যাবে, এখান থেকেও দেখে নিতে পারেন।

ফাঁদে পা দিবেন না

আইইএলটিএস রাইটিং, রিডিং বা স্পিকিং টেস্ট এর সাথে লিসেনিং টেস্ট এর একটি পার্থক্য হলো – লিসেনিং টেস্টে পরীক্ষার্থীদের যোগ্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে ফাঁদ পাতা থাকে। সাধারণত মাল্টিপল চয়েস কোশ্চেনের জন্য এই ফাঁদ পাতা হয়, তবে শূণ্যস্থান পূরণের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হতে পারে।

এই ফাঁদটি হলো – একই প্রশ্নের উত্তরে আপনাকে দুই তিনটি উত্তর শোনানো হবে অথচ সঠিক উত্তর মাত্র একটি। ভালো করে না শুনলে আপনি হয়তো প্রথম বা যে কোন একটিকে উত্তর ধরে নিতে পারেন।

ব্যাখ্যা করে বলছি। ধরা যাক, একজন ওয়েটার দুজনের কাছ থেকে অর্ডার নিচ্ছে। ওয়েটার সাজেস্ট করলো কোক, জ্যাক বলল স্প্রাইট বেটার কিন্তু জন বলল ফ্রুটিকা দিতে। খেয়াল করে না শুনলে আপনি হয়তো মনে করবেন কোক এর অর্ডার দেয়া হয়েছে, আসল উত্তর হয়তো ফ্রুটিকা।

কিভাবে প্রস্তুতি নেয়া উচিত

লিসেনিং টেস্টের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এখানে টিপস, শর্টকাট ইত্যাদি কোন কাজে লাগবে না যদি শোনার দক্ষতা তৈরী না হয়। ফলে লিসেনিং এর প্রস্তুতি বলতে আমি দক্ষতা বৃদ্ধিকেই বোঝাবো।

প্রথমত, জেনে নিন, আইইএলটিএস লিসেনিং এ প্রশ্ন কেমন হয়। এই পোস্টে যা বলা হয়েছে অন্যান্য জায়গা থেকেও মোটামুটি একই তথ্য পাবেন। ফলে আপনার একান্তই আগ্রহ থাকলে ব্রিটিশ কাউন্সিলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে দেখে নিন।

দ্বিতীয়ত, এবার আপনি লিসেনিং টেস্ট দেয়া শুরু করুন। যত বেশী দিতে পারবেন ততই ভালো। বহু ওয়েবসাইটে লিসেনিং টেস্ট দেয়ার সুযোগ রয়েছে। কিছু ওয়েবসাইটের লিংক দিয়েছি এখানে, দেখতে পারেন। ইউটিউবে লিসেনিং টেস্ট পাওয়া যায়, সেগুলোতেও অংশগ্রহণ করতে পারেন। কাগজ-পেন্সিল নিয়ে বসতে ভুল করবেন না যেনো।

তৃতীয়ত, ইংরেজি শব্দগুলোর উচ্চারণ শেখার জন্য দুটো কাজ করা যায়। এক, কিছু ওয়েবসাইটে শব্দের উচ্চারণ টেস্ট করার সুযোগ দেয়, যেমন এই ওয়েবসাইটটি। এখান থেকে উচ্চারণের পার্থক্য জেনে নিতে পারেন। দ্বিতীয়ত, বিবিসি নিউজসহ ইংরেজি সিনেমা, ডকিউমেন্টারী ইত্যাদি দেখার অভ্যাস করুন। এগুলো আপনাকে প্রস্তুত হতে অবেক বেশী সহায়তা করবে।

প্রথম এবং তৃতীয় উপায় অনুসরণ করুন বা না করুন, দ্বিতীয় উপায়টি যেন অবশ্যই অনুসরণ করছেন সেটা নিশ্চিত করুন। নাহয়, ঠকে যাবেন কিন্তু।

প্রয়োজনীয় রসদ

লিসেনিং শেখার জন্য এবং প্র্যাকটিস করার জন্য কিছু ভিডিও দেখা দরকার। এই ভিডিওগুলোতে কিছু টিপস পাওয়া যায়, সেগুলো কাজে লাগুক বা না লাগুক, আপনার কনফিডেন্স তৈরীতে সাহায্য করবে। আর কিছু ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইটগুলো ফ্রি-তে লিসেনিং প্র্যাকটিস করার সুযোগ দেয়। এই প্র্যাকটিস করার জন্য ক্যামব্রিজের বইগুলোও রেকমেন্ড করবো। যদি আপনার হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকে তাহলে এগুলো থেকেও প্র্যাকটিস করুন। এই সকল রসদ পাওয়া যাবে আইইএলটিএস রিসোর্স সেন্টার-এ।

এই দীর্ঘ পোস্টের শেষে আবারও মনে করয়ে দিতে চাই না – লিসেনিং এ খারাপ করা সহজ, ভালো করাও সহজ। শুধু বলতে চাই – প্রচুর প্র্যাকটিস করুন। তাহলে আইইএলটিএস এর ফলাফল দেখে নিজেই চমকে যাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *